প্রথম থেকেই তত্ত্বতালাশের অন্যতম লক্ষ্য বাংলাদেশ অধ্যয়ন। এ কাজ যে আমরা খুব গুছিয়ে করতে পারছি, তা নয়। তবে কাজটা জরুরি। আগামী সংখ্যাগুলোতে আমরা এ ধরনের লেখালেখির পরিমাণ বাড়াতে চাই। আগ্রহী লেখকগণ নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানালে কিংবা লেখায় অগ্রসর হলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। ঠিক শাস্ত্র হিসাবে না হলেও বাংলাদেশ অধ্যয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি জোরালভাবে শুরু হয়েছিল সাতচল্লিশের পরপরই। স্বাধীনতার পরে এ ধরনের তৎপরতা আরো বেড়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিনিয়ত যে বিপুল নথিপত্র উৎপাদিত হচ্ছে–নানা পক্ষের অসন্তোষ ও সন্দেহ সত্ত্বেও–তা নিঃসন্দেহে অন্তত প্রাথমিক উৎস হিসাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও শাস্ত্র হিসাবে বাংলাদেশ অধ্যয়নের কোনো মানসম্মত ধারা গড়ে ওঠে নাই। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশ অধ্যয়ন অনেকটা ‘ইমারজেন্স অব বাংলাদেশ’ নামের কোর্সে পর্যবসিত হয়েছে। এ অধ্যয়নের বিকাশের জন্য তা খুব কাজের হয়েছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ অধ্যয়নকে শুরু থেকেই দুটি বড় প্রতিপক্ষের চাপ সামলাতে হচ্ছে। একদিকে কলকাতার সাংস্কৃতিক ও বু্দ্ধিবৃত্তিক উৎপাদনের চাপ, অন্যদিকে উপনিবেশিতের হীনম্মন্যতার চাপ। বাংলা অঞ্চলের আধুনিকায়ন, ইতিহাসের অসংখ্য মানসম্মত ধারাবিবরণী রচনা, ভালো-মন্দ বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির চলন ইত্যাদি অনেকগুলো বুনিয়াদি দিক কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। কলকাতার সাথে অতীত-সংযোগের কারণে এর একটা বড় অংশকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনিবার্য অংশ বলে মনে করা সহজ ও সম্ভব। ক্ষেত্রবিশেষে তা অনিবার্যই বটে। কিন্তু কলকাতার উৎপাদনগুলোর উপর কর্তৃত্বপূর্ণ দখল কায়েম করে কিভাবে বাংলাদেশ অধ্যয়নের ক্ষেত্রে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে, তার সামঞ্জস্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের এখানে বিকশিত হয়নি। অন্যদিকে উপনিবেশিতের হীনম্মন্যতাজনিত কারণে নিজেদের জীবন ও যাপনের দিকে গভীর অভিনিবেশের সাথে তাকানোর স্বভাবটা আমাদের ভদ্রলোক-সমাজ রপ্ত করে উঠতে পারেনি বলেই মনে হয়। ফলে যেভাবে কোনো জনগোষ্ঠীর ইতিহাসকে পাঠযোগ্য করে তুলতে হয়, যেভাবে জনগোষ্ঠীর কাছে কোনো উপাদানকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয় বা তুলতে হয়, তার চর্চাও খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে।
Reviews
There are no reviews yet.